Sunday, December 21, 2025

হাদি হত্যাকাণ্ড আইপি ট্র্যাকিংয়ে মিলল অবস্থান অভিযুক্ত ফয়সালের

SHARE

 


অনলাইন ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যায়। সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সে বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থান করছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলি চালানোর ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ফয়সাল দেশ ত্যাগ করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ আলামতও সে গোপন বা সরিয়ে ফেলে।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শুটার ফিলিপের দুই সহযোগীর জবানবন্দিতে জানা গেছে, ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ফয়সাল ও তার এক সহযোগী ভারতে পালিয়ে যায়।

সময় টিভির কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফয়সালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে দেখা গেছে, বুধবার তার অবস্থান ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রে। সেখানে সে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির একটি মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই আসামি এখনো পলাতক থাকলেও তদন্তে পুরো ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুলাই মাসে দেশে ফিরে ফয়সাল করিম মাসুদ কবির, কামাল, রুবেল ও মাইনুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে একটি ‘কিলিং মিশন’ শুরু করে। তদন্তে জানা গেছে, তারা সবাই বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতা।

যেভাবে পরিচালিত হয় ‘কিলিং মিশন’

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে যান। প্রায় ছয় মিনিটের ওই সাক্ষাৎ ছিল হাদির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম ধাপ। সেখানে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয়।

এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল আবার ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসে। এ সময় কবির তার সঙ্গে না থাকলেও নতুন সহযোগী হিসেবে আলমগীর উপস্থিত ছিল। ওই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে হাদির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে প্রবেশ করে ফয়সাল।

পরদিন ১২ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেয় ফয়সাল। সেদিনই সে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম নজরদারি চালানো হয়।

মিশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১ ডিসেম্বর ফয়সাল পশ্চিম আগারগাঁওয়ে তার বোনের বাসায় ওঠে। হামলার দিন ভোরে উবারে করে সে হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে যায়।

রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল জানায়, সে হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করেছে এবং এতে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। ঘটনার পর তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেয় সে।

পরে উবারে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেয় ফয়সাল। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয় ফয়সাল ও আলমগীর। তারা সরাসরি সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণাস্থলে পৌঁছায় সকাল পৌনে ১২টার দিকে।

প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা হলে ফয়সাল ও আলমগীর পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। সেখানে আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করে এবং দুজনই পুনরায় প্রচারণায় যুক্ত হয়।

হাদি ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ শেষে প্রচারণা চালান। দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে সেখান থেকে রওনা হলে ফয়সাল ও তার সহযোগীরা আবারও পিছু নেয়। মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে তারা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রবেশ করে।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা উপযুক্ত স্থান খুঁজে নেওয়ার পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।

SHARE

Author: verified_user