Friday, May 30, 2025

সাভারের বিএনপির ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান আলাল  ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়।

সাভারের বিএনপির ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান আলাল ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়।

 


আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধি

এ উপলক্ষে ২৯ মে সাভার উপজেলা অন্তর্ভুক্ত বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ আকরানে মরহুমের বাড়ী সংলগ্ন মিলাদ মাহফিল ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মরহুম মাহমুদুল হাসান আলাল সাভার থানা বিএনপির সাবেক দুইবারের সভাপতি ও বিরুলিয়া ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। অনুষ্ঠিত এ স্মরন সভায় মরহুম আলালের ছোট ভাই সাভার থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফুদ্দিন সাইফুল, সাভার থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বিল্টু, সাভার থানা যুগ্ন সম্পাদক গোলাম হোসেন ডালিম, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক ভিপি পারভেজ মল্লিক, ড্যাফোডিল সিটির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস, সাভার সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন, বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরিফ, ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম, মহিলা ইউপি সদস্য রাজিয়া সুলতানা, সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা, মহিলা ইউপি সদস্য শাহিদা বেগম, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ জনগণ। বক্তব্যে বলেন, মরহুম মাহমুদুল হাসান আলাল ছিলেন বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। দলের কর্মী ও এলাকায় সকলের প্রিয় একজন মানুষ। দলের সাথে তার ছিল আত্মার সম্পর্ক। বেগম খালেদা জিয়ার সকল কর্মসূচীতে স্বতঃফুর্ত অংশ নিতেন তিনি।

উল্লেখ্য মরহুম মাহমুদুল হাসান আলাল ২০২০ সালে ২৯ মে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

Wednesday, May 28, 2025

সাভার উপজেলা তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের কৃষকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন

সাভার উপজেলা তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের কৃষকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন







স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন

ঢাকার সাভারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে সাভার উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনকারী ঢাকা জেলার সেরা কৃষকদের পুরস্কার দেওয়া হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোঃ জাকির হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে প্রধান ভূমিকা রাখে সরিষা, সেই সঙ্গে সূর্যমুখী আংশিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তেল ফসলের ওপর যুগোপযোগী প্রকল্প নেওয়ার ফলে বর্তমানে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুষ্ঠানে সরিষা উৎপাদনে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই ও দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলা সফল ৩ জন চাষির হাতে সনদপত্র ও সম্মানী তুলে দেওয়া হয়।

সাভার পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা

সাভার পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা

 


আনোয়ার হোসেন আন্নু বিশেষ প্রতিনিধি

সাভারে দুর্জয় শেখ (৪৮) নামে একব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের মরদের উদ্ধার করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে সাভার পৌরসভা এলাকার কোটবাড়ি মহল্লা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত দুর্জয় শেখ ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার গোলপাড়া গ্রামের মৃত নাজিমউদ্দীনের ছেলে। নিহতের স্ত্রী বিলকিস জানায়, সাভারের কোটবাড়ি এলাকার আবুল হোসেনের বাড়িতে ভাড়ায় থেকে রাজধানীর কাওরানবাজারে কুলির কাজ করতেন নিহত দুর্জয়। সোমবার রাত ১১টার দিকে তিনি কাওরানবাজার থেকে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে রাত ১টার দিকে দোকানে সিগারেট কেনার কথা বলে বেড়িয়ে যান। পরে সারারাত আর বাসায় ফিরে আসেনি। তবে নিহত দুর্জয় মাদকাসক্ত ছিলেন বলেও জানান তার স্বজনরা। পরবর্তীতে স্থানীয়রা সকালে বাসা থেকে বেশ কিছু দূরে দুর্জয়ের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্বজন ও পুলিশকে খবর দেয়। পরে স্বজনরা গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে এবং পুলিশ গিয়ে নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাদের শেখ জানান, খবর পেয়ে নিহতের মরদের উদ্ধার করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে নিহতের স্ত্রীর ভাষ্য, দুর্জয় কাওরানবাজারে কুলির কাজ করতেন। এছাড়া সে মাদকাসক্ত ছিলেন এবং মাঝে মধ্যে চুরিও করতেন। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এবং হত্যার কারণ অনুসন্ধানে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

Tuesday, May 27, 2025

হেফাজতের আলটিমেটামের পর কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনকে নরসিংদী থেকে বদলি করে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়।

হেফাজতের আলটিমেটামের পর কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনকে নরসিংদী থেকে বদলি করে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়।

 


নিজস্ব প্রতিবেদক


হেফাজতে ইসলামের ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের’ আলটিমেটাম দেওয়ার পর নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বদলির এই তথ্য জানা গেছে।

নাদিরা ইয়াসমিন নরসিংদী জেলায় নারী অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত। ‘নারী অঙ্গন’ নামে তাঁর একটি সংগঠন রয়েছে। এ ছাড়া ‘নারী অঙ্গন’ নামের একটি ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক তিনি। সম্প্রতি ‘হিস্যা’ নামের একটি ম্যাগাজিনে ‘বিতর্কিত লেখা’ ছাপানোর অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।

আলটিমেটামের মুখে নাদিরা ইয়াসমিনকে বদলির আদেশের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘মবের দৌরাত্ম্যে আত্মসমর্পণ করে নাদিরা ইয়াসমিনের বদলির সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বদল করা হোক।

অন্যদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কথার জবার কথায়, লেখার জবাব লেখায় দিতে হবে—কোনো নিপীড়ন জুলুম চলবে না। এটাই ছিল হাসিনা আমলে আমাদের অন্যতম দাবি। হাসিনা সরকার গেছে কিন্তু পরিস্থিতি একই আছে। বৈষম্যবাদী হেফাজতের লোকজন কথার জবাব কথায়, লেখার জবাব লেখায় দিতে অক্ষম। সে জন্য বলপ্রয়োগ, হুংকার, হুমকি, হামলার পথ ধরে। নারীর কণ্ঠ নারীর সক্রিয়তায় তাদের আতঙ্কের প্রকাশ ঘটে উন্মাদের মতো চিৎকার আর হুমকির মধ্যে। শেখ হাসিনা সরকার চলেছে এদের কথামতো, রাতারাতি পাঠ্যপুস্তক বদলেছে, নারীনীতি তালাবদ্ধ রেখেছে...। এই সরকারও তা-ই করে যাচ্ছে। এটাই পরিবর্তন, এটাই সংস্কার?’

বদলির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনও। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে সংযুক্ত হিসেবে আমাকে বদলি করা হয়েছে, শূন্য পদের বিপরীতে নয়। জামায়াত-শিবিরের আস্তানা বলে পরিচিত সাতক্ষীরায় বদলি না করে ঢাকা বা অন্য কোনো জেলার কলেজে বদলি করা যেত। নরসিংদীতে হেফাজতের ব্যানারে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার-আন্দোলন হলেও যেসব দল ছদ্মবেশে এসব কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবির অন্যতম প্রধান। আমাকে সাতক্ষীরায় বদলির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’

এর আগে ম্যাগাজিনে ‘বিতর্কিত’ লেখা ছাপানোর অভিযোগে নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার দুপুরে নরসিংদী সরকারি কলেজসংলগ্ন শিক্ষা চত্বর এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেন জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের নেতারা তাঁদের বক্তব্যে নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ‘কোরআন ও ইসলাম অবমাননা’র অভিযোগ তুলে অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়।

কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনের অপসারণের দাবিতে নরসিংদী জেলা হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনের অপসারণের দাবিতে নরসিংদী জেলা হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
ছবি: সংগৃহীত

গতকালের সমাবেশ থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, নাদিরা ইয়াসমিন সম্পাদিত ‘হিস্যা’ নামের ম্যাগাজিনে বিতর্কিত বক্তব্য ছাপা হয়েছে। এ ম্যাগাজিনে পবিত্র কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানকে অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো কোরআনের বিধানে সমাজ ও রাষ্ট্রে চলবে না, মন্তব্য করা হয়েছে। এ ছাড়া নারী-পুরুষের পবিত্রতম বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। আলেম ও ইসলামপন্থীদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে। ‘নারী অঙ্গন’ থেকে অসংখ্য সমাজ ও ইসলামবিরোধী বক্তব্যসংবলিত লিফলেট প্রচার করে যাচ্ছেন তাঁরা।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নাদিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘নারী অঙ্গন শুরু থেকেই ধর্ম-সমাজ-সময়কে পাশাপাশি ও বিবেচনায় রেখেই কাজ করে এসেছি এবং নিজেদের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে মনে করি না। যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের অবস্থান জানান দেওয়া দরকার। তা ছাড়া সংগঠন বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমানুষের কৈফিয়ত তলব মূলত সেই সংগঠনের প্রতি প্রত্যাশার জায়গা থেকেই করা হয় বলে নারী অঙ্গন মনে করে, আমি মনে করি। এত কিছু ঘটা বা ঘটানোর আগে যদি কেউ এসে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে আলাপ করতে চাইত, আমরা সাদরে সেই আলাপে অংশ নিতাম। আমি বা আমরা এখনো বিশ্বাস করি, পুরো বিষয়টা ঘটেছে পরস্পরের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণেই। কারণ, আমরা কাউকে, কোনো কিছুকেই আমাদের প্রতিপক্ষ বলে মনে করি না, ধর্মকে তো নয়ই।’

নাদিরা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রদান করা সব সুপারিশ আমাদেরও সুপারিশ ও সমর্থন আছে ধরে নিয়ে যেসব সুপারিশের সঙ্গে ওনারা (আন্দোলনকারীরা) একমত নন, সেগুলোর জন্য কেবল নারী কমিশনকে দায়ী না করে কিংবা সমালোচনা না করে নারী অঙ্গনের ওপর দায় আরোপ করছেন। এ ভুল-বোঝাবুঝি হয়তো তৈরি হয়েছে আমরা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছি বলে এবং বেশ কিছু সুপারিশ আমাদের ফেসবুক পেজে প্রচারণা চালিয়েছি বলে।’

বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে এখনো বা ঐকমত্য তৈরি হয়নি — মন্তব্য করেছেন আলী রীয়াজ।

বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে এখনো বা ঐকমত্য তৈরি হয়নি — মন্তব্য করেছেন আলী রীয়াজ।

 


নিজস্ব প্রতিবেদক


বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয় ১৯ মে। এ আলোচনার অগ্রগতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যেসব বিষয়ে এ পর্বে ঐকমত্য হয়নি বা দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি, সেসব বিষয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা হবে। শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে কোনগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে আর কোনগুলোর বিষয়ে হয়নি, তা সংবাদ সম্মেলনে আংশিকভাবে তুলে ধরা হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া কী হবে—এ ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে এসব বিষয়ে অনেক দলই আরও আলোচনার কথা বলেছে এবং আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে।

আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য হলেও অনেক বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা আংশিক ঐকমত্য আছে, সেগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে ‘বহুত্ববাদ’ না রাখার ব্যাপারে অধিকাংশ দল মত দিয়েছে। অন্য চারটি মূলনীতির ব্যাপারে একধরনের ঐকমত্য আছে। তবে অনেক দল এ চারটির বাইরেও অন্যান্য বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিছু দল অবশ্য এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে একধরনের ঐকমত্য রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। তবে এর পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। উচ্চকক্ষ গঠনকে যেসব দল সমর্থন করে, তারা ১০০ জন সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের ব্যাপারে একমত। তবে এই প্রতিনিধিদের কীভাবে নির্বাচন করা হবে, সে ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন থাকলেও এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বলে সেগুলো সংবিধান সংস্কারবিষয়ক আলোচনায় ঐকমত্যের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু অনেক বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য বা আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাপারে সব দল একমত পোষণ করেছে। দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত। তবে এ ব্যাপারে মতের ভিন্নতা আছে। নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব কোনো মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিধান করার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো।

এ ছাড়া সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে কমিশনারদের মেয়াদ–পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে সুপারিশসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের বিধান করার বিষয়ে বেশির ভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী (ট্রাইব্যুনাল) আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার জন্য অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করা, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে বেশির ভাগ দল একমত হয়নি।

গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সমস্যা কোথায় – প্রশ্ন আমীর খসরুর।

গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সমস্যা কোথায় – প্রশ্ন আমীর খসরুর।

 




নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জন্য দেশের মানুষ মুখিয়ে ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রশ্ন করেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে সেনাপ্রধান এখন বক্তব্য দিলে তাতে সমস্যা কোথায়?

সেনাপ্রধানের প্রস্তাবকে ইতিবাচক অভিহিত করে আমীর খসরু বলেছেন, ‘তিনি (সেনাপ্রধান) বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।’ আজ সোমবার রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

কারও একক সুবিধার জন্য ঐক্য গঠন সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের জন্য গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করাটা গ্রহণযোগ্য নয়। সংস্কারের কথা বিএনপি সাত বছর আগেই বলেছে। আমাদের ২৭ দফা ও যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের সমন্বয় সেটা পরে ৩১ দফায় পরিণত হয়। কাজেই সংস্কারের কথা আমাদের। যারা বাস্তবায়নের কথা বলছেন, এটা তাঁদের কথা নয়।

বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে যাঁরা ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, সেসব ছাত্রনেতার মধ্যে কতজন এখন ঐক্যবদ্ধ আছেন? কবে তাঁরা জনপ্রিয় হবেন, তারপর নির্বাচনে যাবেন, এসব খেলা মানুষ বোঝে।’

অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাক্‌স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা গোল্ডেন রুল। সরকার যখনই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে, তখনই দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করবে। আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব ছাড়ার পরেও তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সরকার কাজ করতে পারবে, এমন পরিবেশ অব্যাহত থাকবে।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বহু মানুষের ত্যাগকে স্মরণ করা হয় না বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে হাসিনা শুধু কিছু মানুষের মৌখিক কথায় পালিয়ে গেছে। “আনসাং হিরোদের” কৃতিত্ব না দিয়ে শুধু গুটিকয় মানুষ কৃতিত্ব নিলে এটা বিশ্বাসযোগ্য হবে?’


কারও একক কৃতিত্বের জন্য জাতিকে বিভক্ত করা হলে সেটা কারও জন্য সুখকর হবে না বলে সতর্ক করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসকে স্বীকার করতে হবে। যাঁরা মারা গেছেন, জেলবন্দী থেকে নির্যাতন সহ্য করেছেন, তাঁদের ভুলে গেলে হবে না।’

শেখ হাসিনার আমলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের কোনো বক্তব্য দেওয়ার জন্যও খুঁজে পাওয়া যেত না বলে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হাসিনা না পালালে এখন রাজনীতিবিদদের কী অবস্থা হতো? কারও ফাঁসি, কেউ আয়নাঘরে বা কেউ আজীবন জেলে থাকতেন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের লোকেরা কোথায় থাকতেন? তাঁ নিজ নিজ কাজেই ব্যস্ত থাকতেন।’

অনলাইন নিউজ পোর্টাল শীর্ষ নিউজ ডটকমের নতুন যাত্রা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিউজ পোর্টালটির সম্পাদক একরামুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ অর্ধশতাব্দী সময় পার করলেও রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে উন্নয়ন অর্জিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধও থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পুরোনো ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দেওয়া যাবে না।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই গণমাধ্যম স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আমলে ছাপা পত্রিকা থেকে অনলাইন এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়। তবে ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো রয়ে গেছে।’

সব সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের শাসকেরা যে যখন ক্ষমতায় থাকেন, তখন গণমাধ্যম নিয়ে সংবেদনশীল থাকেন। আর যখন বিরোধী শিবিরে থাকেন, তখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা বলেন। আবার হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।’

সরকার অনেক ধরনের সংস্কারের কথা বললেও এখনো দৃশ্যমান কিছুই দেখা যায়নি উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, ‘বিভিন্ন কমিশন দুর্নীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যারা ছয় মাসে কিছু করতে পারেনি, তারা ছয় বছরে কিছু করতে পারবে, এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না।’

সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণের আহ্বান জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা রাখতে চাই। তবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হয়নি। যাকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে, তিনি তিন বাহিনীর ওপর খবরদারি করতে চাইছেন। সরকারের উচিত হবে, বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অপসারণ করা। শুধু মৌখিক আশ্বাসে দেশ চলবে না। আমরা নির্দিষ্ট কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা দেখতে চাই।’

গণ–অভ্যুত্থানের চিত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিপীড়নের চিত্র কখনো উঠে আসে না বলে মন্তব্য করেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের সময়ে রাজনীতিবিদেরা অনিশ্চিত জীবনে ছিলেন। কখন কোন বক্তব্যের কারণে ডিজিএফআই এসে রাতে গুম করে। সেই আতঙ্কে দিন কাটাতে হতো। কিন্তু এখন কথা বলতে ভাবতে হয়, কোন কথা বললে প্রধান উপদেষ্টা বা বিএনপি কিংবা অন্য কেউ রাগ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবেন, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘তিনি ফ্রান্সের তিনজন চিত্রকর এলে সম্ভবত এক ঘণ্টা সময় দেন। চা খাবেন, ছবি তুলবেন। কিন্তু দেশের দুইজন রাজনীতিবিদ গেলে তাঁদের সঙ্গে ১০ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারবেন না। আমি অধ্যাপক ইউনূসের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার কথা বলছি। এই বক্তব্যকে সমালোচনা হিসেবে নিলে সমালোচনা হবে। কিন্তু এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে হবে।’

ফ্যাসিবাদী আমলের গণমাধ্যমের ভূমিকা এখন কতটা পরিবর্তন হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘বিগত সময়ে নাহিদ ইসলাম তাঁর কাজ অসমাপ্ত রেখেই পদত্যাগ করেন। আরেকজন নামধারী মাস্টারমাইন্ড সেই পদে বসেছেন। কিন্তু তিনিও তাঁর কাজ কতটা করছেন?’

সংস্কারের নামে সরকার মুখে ফেনা তুলছে উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘জনগণ এখনো ধোঁয়াশায় রয়েছে। সরকার বারবার সংলাপ করছে। কিন্তু এই সংলাপের ফলাফল কী, আমরা কেউই জানি না। জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ডেকে কোনো সিদ্ধান্ত না দিতে পারলে এ ধরনের সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা চা–শিঙাড়ার সংলাপ।’

সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি।

সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি।

 


নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি বরং একসঙ্গে কাজ করছে। আজ সোমবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে সেনা সদর।
ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।’

করিডর নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ। এ দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও ভালো–মন্দের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে হলে আমাদেরকেই রাখতে হবে।’

ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ‘সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে, ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়তই সরকারের সঙ্গে কাজ করছি, সরকারের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি। দেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা কথা বলতেই পারে। এটা নিয়ে আমরা যেভাবে চিন্তা করছি যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়াতে বিষয়টি যেভাবে আসছে—এ রকম আসলেই কিছু হয়নি। সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। এটা ভুলভাবে ব‍্যাখ‍্যা করার কোনো সুযোগ নেই।

ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ‘একটা বাজে অবস্থার ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম। সেখান থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অন্য সংস্থাগুলোও কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে যে স্থিতিশীল অবস্থা আমরা চাই, সে অবস্থায় আমরা যেতে পারব। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে আমরা এমন কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে নেই যে সবকিছু স্বাভাবিক চলবে। কিছু কিছু অসংগতি থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সেটাকে মিটিয়ে ফেলে যেন সম্মিলিতভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।’

মিয়ানমার সীমান্ত ও করিডর প্রসঙ্গ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর–সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, করিডর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।

সীমান্তের সুরক্ষা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সীমান্ত নিয়ে কোনো আপস করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দু পরিমাণ শক্তি থাকবে, আমরা আপস করবও না। এটা আমাদের দেশ। যেকোনো মূল্যেই আমরা এটাকে রক্ষা করব।’

বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এই সীমান্ত অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে আছে। এখানে মিয়ানমার সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরোটা, ৮৫–৯০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। কিছু জায়গা বাকি আছে। আবার আরাকান আর্মিও ‘অথরাইজড’ সংগঠন নয়। এই জায়গাটাতে সেভাবে না আছে সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো অবস্থা। এ জন্য এ মুহূর্তে বাংলাদেশ–মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে যেকোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সে জন্য কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর মুভমেন্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিজিবি সেখানে কাজ করছে। আমরা এই সীমান্তে প্রচণ্ডভাবে নজর রাখছি।’

রাখাইনের আরাকান আর্মি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে—এমন সংবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। আপনারা গণমাধ্যমে যেটি দেখেছেন, সেটির বস্তুনিষ্ঠতা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।’

অফিসার্স অ্যাড্রেস নিয়ে আলোচনা

সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, করিডর, বন্দর ও স্টারলিংকের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে—এ বিষয়ে সেনা সদরের বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। উত্তরে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান সময়ে সময়ে অফিসার ও সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন এবং নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ওই অনুষ্ঠান তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে কোনো সাংবাদিককে ডাকা হয়নি বা আইএসপিআরও (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর) সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এ জন্য গণমাধ্যমে বা সামাজিক মাধ্যমে যা দেখছেন, তার সঠিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।

অফিসার্স অ্যাড্রেসে যে বিষয়গুলো এসেছে, সেগুলো সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কি না—জানতে চাইলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অফিসার্স অ্যাড্রেস নিতান্তই সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।’

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে

ইউপিডিএফ ও কেএনএফ প্রসঙ্গ

১০ মে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ওই সংলাপে ইউপিডিএফ আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি সংলাপে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন দলটির সংগঠক মাইকেল চাকমা।

এই সংগঠনের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের বিষয়েও প্রশ্ন আসে সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে। জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ে যে দলের কথা বলেছেন, আপনারাই জানেন এটি একটি আত্মস্বীকৃত টেররিস্ট (সন্ত্রাসী) দল, যারা সংঘাতপূর্ণ কাজ করে থাকে। তাদের নির্বাচনে যুক্ত করা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।’

চট্টগ্রাম নগরের একটি কারখানা থেকে ছয় দিন আগে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করা হয়েছে। ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে পোশাকগুলো জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে পুলিশ জানায়, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো তৈরির ফরমাশ নেওয়া হয়।

পোশাক উদ্ধারের প্রসঙ্গ টেনে কুকি–চীনের তৎপরতা নিয়ে জানতে চাইলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কুকি–চীন বম সম্প্রদায়কেন্দ্রিক একটি সংগঠন। তাদের মোট সংখ্যা ১২ হাজার। তাদের সবাই সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাহলে তাদের যে পোশাকের সংখ্যার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই তথ্যগুলোর সত্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যাচাইয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

যেহেতু গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমের খবরের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—তাহলে এসব বিষয়ে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা আপনাদেরকে বিষয়গুলো জানাব।’

পরে কেএনএফের বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের অস্ত্রের ব্যবহার আমরা দেখেছি। কয়েকজন সেনাসদস্য তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন। কেএনএফের এতগুলো ইউনিফর্ম কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। এটা কোনো ভালো খবর না। এ বিষয়টি আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি।’

ক্ষমতা নেওয়ার ইচ্ছা নেই

দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় যাচ্ছে, এমন কিছু আলোচনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে সেনা সদরের বক্তব্য জানতে চান। জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা বা এ ধরনের কোনো আলোচনা আমাদের মধ্যে হয়নি। এ বিষয়ে আমরা কোনো তথ্য দিতে পারছি না।’

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকার ও সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানের কিছু আলোচনা সামনে আসছে, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মুখোমুখি অবস্থান দেখছি না। আমাদের মধ্যে যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। আমরা একসাথে দেশের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যদি কোনো হুমকি আসে, তখন সেনাবাহিনীর অবস্থান কী হবে, জানতে চাইলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী সর্বদা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও দেশের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবে।

আলোচনায় লালমনিরহাট বিমানবন্দর

লালমনিরহাট বিমানবন্দর নিয়ে অতীতে অনেক টানাপোড়েন ছিল উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক জানতে চান, এই বিমানবন্দর ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশের ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে কি না? এ ক্ষেত্রে চীন ও ভারত দুটি দেশের প্রসঙ্গ টানেন ওই সাংবাদিক। জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। লালমনিরহাটের বিমানবন্দরটি অনেক পুরোনো, তবে ব্যবহার হয়নি। প্রয়োজনের নিরিখে সেটাকে আবার সচল করা হচ্ছে। নতুন করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ‘দেশের সম্পদ দেশের প্রয়োজনে ব্যবহার হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এত দিন প্রয়োজন হয়নি, ব্যবহার হয়নি। এখন প্রয়োজন পড়েছে, ব্যবহার হচ্ছে। নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। কলেবর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেখানে নতুন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।’

চীন ওই বিমানবন্দর ব্যবহার করবে কি না, এ বিষয়ে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। তিনি মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা বা স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, এ রকম কোনো দেশকে অনুমতি দেওয়ার বা সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই সরকার ভেবে দেখবে।

ভারত থেকে পুশ ইন গ্রহণযোগ্য নয়

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম বলেন, ‘পুশ ইনের বিষয়টি আমরা লক্ষ করছি। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়, গ্রহণযোগ্য নয়। পুশ ইন হতে থাকবে আর আমরা বসে থাকব, এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বিজিবি এটা নিয়ে কাজ করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন।’

ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একটি জায়গা পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে। তার বাইরে প্রয়োজন ছাড়া যেতে পারে না। এ পরিস্থিতিতে বিজিবি পুশ ইনের বিষয়টি সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। পরিস্থিতির যদি উদ্ভব হয়, সেখানে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত হওয়ার দরকার হয়, তাহলে সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনী সেখানে যাবে। কিন্তু এ মুহূর্তে বিজিবি এটি সুন্দরভাবে ‘ম্যানেজ’ করছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেবল গণমাধ্যমে যে বিষয়গুলো আসছে, সেগুলোই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলার সূচকগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে এবং কিছুটা ভালো হয়েছে। সেনাবাহিনী নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। অন্যান্য সকল বাহিনী নিয়ে সম্মিলিত কাজের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করে সেনাবাহিনী।’

সেনা সদর জানায়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯টি গোলাবারুদ এবং গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ঈদুল আজহার প্রস্তুতি

ঈদুল আজহার সময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোয় নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিনরাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি বা বেশি দামে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়, মূল সড়কের পাশে পশুর হাটের অবস্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে জনসাধারণের মধ্যে দুর্ভোগ ও জানমালের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে বলে ব্রিফিংয়ে বলা হয়।