Tuesday, May 27, 2025

হেফাজতের আলটিমেটামের পর কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনকে নরসিংদী থেকে বদলি করে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়।

SHARE

 


নিজস্ব প্রতিবেদক


হেফাজতে ইসলামের ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের’ আলটিমেটাম দেওয়ার পর নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বদলির এই তথ্য জানা গেছে।

নাদিরা ইয়াসমিন নরসিংদী জেলায় নারী অধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত। ‘নারী অঙ্গন’ নামে তাঁর একটি সংগঠন রয়েছে। এ ছাড়া ‘নারী অঙ্গন’ নামের একটি ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক তিনি। সম্প্রতি ‘হিস্যা’ নামের একটি ম্যাগাজিনে ‘বিতর্কিত লেখা’ ছাপানোর অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।

আলটিমেটামের মুখে নাদিরা ইয়াসমিনকে বদলির আদেশের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘মবের দৌরাত্ম্যে আত্মসমর্পণ করে নাদিরা ইয়াসমিনের বদলির সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বদল করা হোক।

অন্যদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কথার জবার কথায়, লেখার জবাব লেখায় দিতে হবে—কোনো নিপীড়ন জুলুম চলবে না। এটাই ছিল হাসিনা আমলে আমাদের অন্যতম দাবি। হাসিনা সরকার গেছে কিন্তু পরিস্থিতি একই আছে। বৈষম্যবাদী হেফাজতের লোকজন কথার জবাব কথায়, লেখার জবাব লেখায় দিতে অক্ষম। সে জন্য বলপ্রয়োগ, হুংকার, হুমকি, হামলার পথ ধরে। নারীর কণ্ঠ নারীর সক্রিয়তায় তাদের আতঙ্কের প্রকাশ ঘটে উন্মাদের মতো চিৎকার আর হুমকির মধ্যে। শেখ হাসিনা সরকার চলেছে এদের কথামতো, রাতারাতি পাঠ্যপুস্তক বদলেছে, নারীনীতি তালাবদ্ধ রেখেছে...। এই সরকারও তা-ই করে যাচ্ছে। এটাই পরিবর্তন, এটাই সংস্কার?’

বদলির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনও। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে সংযুক্ত হিসেবে আমাকে বদলি করা হয়েছে, শূন্য পদের বিপরীতে নয়। জামায়াত-শিবিরের আস্তানা বলে পরিচিত সাতক্ষীরায় বদলি না করে ঢাকা বা অন্য কোনো জেলার কলেজে বদলি করা যেত। নরসিংদীতে হেফাজতের ব্যানারে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার-আন্দোলন হলেও যেসব দল ছদ্মবেশে এসব কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্যে জামায়াত-শিবির অন্যতম প্রধান। আমাকে সাতক্ষীরায় বদলির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’

এর আগে ম্যাগাজিনে ‘বিতর্কিত’ লেখা ছাপানোর অভিযোগে নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার দুপুরে নরসিংদী সরকারি কলেজসংলগ্ন শিক্ষা চত্বর এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেন জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের নেতারা তাঁদের বক্তব্যে নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ‘কোরআন ও ইসলাম অবমাননা’র অভিযোগ তুলে অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়।

কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনের অপসারণের দাবিতে নরসিংদী জেলা হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
কলেজশিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনের অপসারণের দাবিতে নরসিংদী জেলা হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
ছবি: সংগৃহীত

গতকালের সমাবেশ থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, নাদিরা ইয়াসমিন সম্পাদিত ‘হিস্যা’ নামের ম্যাগাজিনে বিতর্কিত বক্তব্য ছাপা হয়েছে। এ ম্যাগাজিনে পবিত্র কোরআনের উত্তরাধিকার বিধানকে অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো কোরআনের বিধানে সমাজ ও রাষ্ট্রে চলবে না, মন্তব্য করা হয়েছে। এ ছাড়া নারী-পুরুষের পবিত্রতম বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। আলেম ও ইসলামপন্থীদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে। ‘নারী অঙ্গন’ থেকে অসংখ্য সমাজ ও ইসলামবিরোধী বক্তব্যসংবলিত লিফলেট প্রচার করে যাচ্ছেন তাঁরা।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নাদিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘নারী অঙ্গন শুরু থেকেই ধর্ম-সমাজ-সময়কে পাশাপাশি ও বিবেচনায় রেখেই কাজ করে এসেছি এবং নিজেদের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে মনে করি না। যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের অবস্থান জানান দেওয়া দরকার। তা ছাড়া সংগঠন বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমানুষের কৈফিয়ত তলব মূলত সেই সংগঠনের প্রতি প্রত্যাশার জায়গা থেকেই করা হয় বলে নারী অঙ্গন মনে করে, আমি মনে করি। এত কিছু ঘটা বা ঘটানোর আগে যদি কেউ এসে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে আলাপ করতে চাইত, আমরা সাদরে সেই আলাপে অংশ নিতাম। আমি বা আমরা এখনো বিশ্বাস করি, পুরো বিষয়টা ঘটেছে পরস্পরের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণেই। কারণ, আমরা কাউকে, কোনো কিছুকেই আমাদের প্রতিপক্ষ বলে মনে করি না, ধর্মকে তো নয়ই।’

নাদিরা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রদান করা সব সুপারিশ আমাদেরও সুপারিশ ও সমর্থন আছে ধরে নিয়ে যেসব সুপারিশের সঙ্গে ওনারা (আন্দোলনকারীরা) একমত নন, সেগুলোর জন্য কেবল নারী কমিশনকে দায়ী না করে কিংবা সমালোচনা না করে নারী অঙ্গনের ওপর দায় আরোপ করছেন। এ ভুল-বোঝাবুঝি হয়তো তৈরি হয়েছে আমরা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছি বলে এবং বেশ কিছু সুপারিশ আমাদের ফেসবুক পেজে প্রচারণা চালিয়েছি বলে।’

SHARE

Author: verified_user