গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান জোরদার, দুই দিনে নিহত ৪৩০ জনের বেশি
বিমান হামলার পর এবার গাজায় স্থল অভিযানের ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত দুই দিনে সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৩০ জন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের সেনারা গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের ‘নেতজারিম করিডোর’ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে, যা গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে আলাদা করে দিয়েছে।
এই অভিযানের মধ্য দিয়ে জানুয়ারি থেকে চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যত ভেঙে পড়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, "আমরা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ শুরু করেছি—এখনো কেবল শুরু।" তিনি হামাসকে দায়ী করে জানান, জিম্মিদের মুক্তি দিতে তাদের অনীহা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে সেনাবাহিনীকে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে বলা হয়েছে।
ইসরায়েল জানায়, এখনো হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা।
ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী ইসরায়েলের দিকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্য ছিল তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর। যদিও সেটি মাঝপথেই প্রতিহত করা হয়েছে।
বড় পরিসরে স্থল অভিযান শুরুর আভাস
আইডিএফ জানিয়েছে, তারা গাজার ভেতরে “উত্তর-দক্ষিণ বিভাজক” হিসেবে একটি বাফার জোন তৈরি করতে চায় এবং সে লক্ষ্যে নেতজারিম করিডোরে তৎপরতা চলছে।
উত্তর গাজার বেইত হানুনসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী অবস্থান নিচ্ছে এবং সেসব এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। স্থলসীমান্তের আশেপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেখে ধারণা করা হচ্ছে—বড় পরিসরে স্থল অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।
এই নির্দেশনার কারণে বহু পরিবার, যারা যুদ্ধবিরতির সময় নিজ বাসায় ফিরে এসেছিল, আবারও আতঙ্কে পড়ে যাচ্ছে। তাদের অনেকেই যেটুকু মালপত্র রয়েছে তা নিয়েই হেঁটে বা ঠেলাগাড়িতে করে সরে যাচ্ছে।
মার্চে যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এবার বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
আকস্মিক হামলায় বিপর্যস্ত গাজাবাসী
দক্ষিণ গাজায় কর্মরত প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক ডা. সাবরিনা দাস বিবিসিকে বলেন, “হামলাটা এতটাই আকস্মিক ছিল যে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বুঝে গিয়েছিলাম, যুদ্ধ আবার শুরু হয়ে গেছে।”
তিনি জানান, নাসার হাসপাতালে তার সহকর্মীরা পুরো রাত ধরে অস্ত্রোপচার করছিলেন, কারণ আবারও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
গাজার হাসপাতাল বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ জাকুত বলেন, আক্রমণ এতটাই হঠাৎ ছিল যে চিকিৎসাকর্মীরা প্রস্তুতই ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনীয় জনবলও ছিল না। জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত কর্মী ডেকে আনা হয়।
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ের পর মার্চের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার কথা ছিল, যা আর শুরু হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাড়িয়ে আরও জিম্মি মুক্ত করতে চাইলে হামাস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও, তাতে মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘ কর্মী নিহত, বিস্ফোরণে রহস্য
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার দেইর আল বালাহ এলাকায় বিস্ফোরণে তাদের এক কর্মীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েল এই ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে এবং তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রকল্প সংস্থা ইউএনওপিএস জানায়, একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ভবনে বিস্ফোরক নিক্ষেপ বা গুলি করা হয়। কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
সংস্থাটির প্রধান হোর্হে মোরেইরা দা সিলভা বলেন, “আমার বিশ্বাস, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়।
0 comments: