Sunday, April 6, 2025

রাখাইনে আরাকান আর্মি ও আরসার মধ্যে ফের সংঘাত, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

SHARE

 



রাখাইনে আবার আরাকান আর্মি ও আরসার সংঘর্ষ, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ ও আশপাশের এলাকায় আবারও শুরু হয়েছে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ। কয়েক দিন বিরতির পর ফের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

মংডুতে মাইকিং করে আরসার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে রোহিঙ্গাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আরাকান আর্মি। এএ এখন মংডুর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সাতটি গ্রাম ঘিরে রেখেছে। দুই পক্ষই নিজেদের রক্ষা ও পাল্টা আক্রমণের উদ্দেশ্যে সীমান্তপথসহ বিভিন্ন স্থানে স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এসব মাইন বিস্ফোরণেও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ আজ রোববার নাফ নদীর তোঁতারদিয়া সীমান্তে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি জেলের পা উড়ে গেছে।

রাখাইনের স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘নিরিঞ্জারা’র তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ এপ্রিল মংডুর মায়াওয়াড়ি ও বুচিডংয়ের খামি গ্রামে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ মগ সম্প্রদায়ের চারজনকে হত্যা করে আরসা। নিহতদের বয়স ১৭ থেকে ৪১ বছর। এর আগে ২৯ ও ৩০ মার্চেও আরসার গুলিতে আরও কয়েকজন বৌদ্ধ প্রাণ হারান।

২৯ মার্চ দুপুরে মোটরসাইকেলে চলা পাঁচজন আরাকান আর্মি সদস্যের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় প্রায় ৬০ জন আরসা সদস্য। এতে দুজন এএ সদস্য নিহত হন। এরপর থেকেই আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। বিকেল ৫টার পর কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

৪ এপ্রিল মংডুর এক গ্রামে আরসা সদস্যদের অবস্থানের খবরে অভিযান চালিয়ে দুটি জি-৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে আরাকান আর্মি। এতে দুজন আরসা সদস্যও নিহত হন।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দীর্ঘ সংঘাতের পর রাখাইনের ৮০–৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকেই তারা রাজধানী সিথুয়ে (আকিয়াব) দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা শান্ত অবস্থা ছিল, মার্চ থেকে আবারও সংঘর্ষ বাড়তে থাকে।

এরই মধ্যে গত ১৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ১০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। বর্তমানে আতাউল্লাহসহ ছয়জন রিমান্ডে রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার ও বান্দরবানে মোট পাঁচটি হত্যা মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, নারায়ণগঞ্জে তদন্ত শেষ হলে তাঁদের কক্সবাজারে এনে এখানকার মামলাগুলোতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্র ও রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, আতাউল্লাহর অনুপস্থিতিতে শেখ বোরহান নামে একজন নেতা আরসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে অডিও বার্তার মাধ্যমে রাখাইনের সংঘাত পরিচালনা করছেন।

উভয় পাশে রোহিঙ্গারা আতঙ্কে

রাখাইনে সংঘর্ষ বাড়তে থাকায় মংডুতে থাকা প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা চরম আতঙ্কে আছেন। একইভাবে কক্সবাজারের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মাঝেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সংখ্যা ৮ লাখের বেশি। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। বরং গত কয়েক মাসে আরাকান আর্মির নির্যাতনের কারণে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রাখাইনের এই নতুন সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু রোহিঙ্গাকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এতে আরাকান আর্মি ক্ষুব্ধ হয়ে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। তারা চায়—বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল তাদের সঙ্গে কথা বলুক।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা কামাল আহমদ বলেন, আতাউল্লাহ বরাবরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আরসা রাখাইনে সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়েছে, যা আরাকান আর্মির বিরাগভাজন হয়েছে। সেই কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে। এখন আবার সংঘাত শুরু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন রোহিঙ্গারাই।

উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন জানান, কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে আরসা ও আরএসও (আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন)-র মধ্যে আগে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে নারায়ণগঞ্জে আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিবিরগুলোতে আরসার তৎপরতা অনেকটাই থেমে গেছে।

SHARE

Author: verified_user

0 comments: