Thursday, June 5, 2025

নিশিরাতে আলো ঝলমল করছিল, বিজয়ের উল্লাস ছিল, আর সঙ্গে ছিলেন একজন হামজা চৌধুরী।

SHARE

 

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট নিভে গেছে। গ্যালারির শোরগোল থেমে এসেছে। অন্ধকার ছড়িয়ে পড়া স্টেডিয়ামে তবু যেন আলোর কমতি নেই! রাতটা যে শুধুই ভুটানের বিপক্ষে একটা জয়ের নয়, নতুন শুরুর সাক্ষীও।

ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ শুধু ম্যাচই জেতেনি, জিতেছে আত্মবিশ্বাসও। ফিরে পেয়েছে ফুটবল-উন্মাদনাও। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এসেছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কোচিং স্টাফরাও। তাঁদের সাংবাদিকদের সারিতে বসিয়ে হেসে বললেন, ‘এটা প্রত্যাশিত জয়। সেট পিস থেকে গোল পেয়েছি আমরা, খেলোয়াড়দের মানসিকতাও ছিল দারুণ ইতিবাচক।

তবে আসল প্রশংসাটা এল প্রতিপক্ষের শিবির থেকে। ভুটানের জাপানি কোচ আতসুশি নাকামুরা বললেন, ‘হামজাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সে এক উঁচুমানের খেলোয়াড়। বল পায়ে এবং বল ছাড়া—দুই ভূমিকাতেই সে অনন্য। মাঠে তার উপস্থিতি অন্যরকম। এ ধরনের খেলোয়াড় যেকোনো দলের জন্যই সম্পদ।’

এরপর যোগ করলেন, ‘এই ম্যাচটি আমাদের জন্য কঠিন ছিল। গত বছর থিম্পুতে বাংলাদেশকে দেখেছি লম্বা বল খেলতে, কিন্তু এই বাংলাদেশ পাসিং, বিল্ডআপ ও মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণে অনেক উন্নতি করেছে। আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে হামজা।’ কাবরেরাও মেনে নিলেন সেই কথা, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। ভুটানের কোচের কথা মানছি আমি। হামজার সেট পিস থেকে গোল করা আমাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল। তার গোল আমাদের পরিকল্পনা সফল করেছে।’


জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকের প্রশংসা করলেন কাবরেরা। প্রশংসা করলেন ভুটানের কোচও, ‘আমি সাধারণত জোরে কথা বলি। কিন্তু আজ গ্যালারির আওয়াজে নিজের কথা নিজেই শুনতে পারছিলাম না। এটা স্বাভাবিক, হোম ম্যাচ। তবে দর্শক অসাধারণ ছিল। আমরা হারলেও ভালো ম্যাচ হয়েছে।

বাংলাদেশের একাদশে বুধবার দেখা গেল পাঁচ প্রবাসী ফুটবলারকে—হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, কাজেম শাহ, ফাহামিদুল ইসলাম ও তারিক কাজী। এই একাদশ কিছুটা চমকপ্রদ—বিশেষ করে কাজেমের জায়গা পাওয়া, জামালের প্রত্যাবর্তন। এ নিয়ে কাবরেরার মন্তব্য, ‘এই লাইনআপে আমি সন্তুষ্ট। সবাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে।’

বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে ফাহামিদুল ইসলামেরঅভিষিক্ত ফাহামিদুল ইসলাম আলোচনায় এসেছেন প্রথম ম্যাচেই। চোখে পড়ার মতো দৌড়, দু-তিনটি সাহসী শট। কিন্তু গোল পাননি। দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তাঁকে তুলে নেন, তবে তাঁর খেলা নিয়ে কাবরেরা সন্তুষ্টই, ‘সে একটু নার্ভাস ছিল। স্বাভাবিক, প্রথম ম্যাচ। কিন্তু আমি তার খেলায় খুশি। ম্যাচ টাইম পেলে আরও ভালো করবে।’

১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে এই প্রস্তুতি কতটা কার্যকর? কাবরেরার সোজাসাপটা উত্তর, ‘খুব ভালো। মাঠের পরিবেশ অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে। আমরা উপভোগ করেছি।

উপভোগ করেছেন কানাডাপ্রবাসী শমিত সোমও। শমিত ভোরে ঢাকায় এসে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচ দেখেছেন। ১০ জুন তাঁর অভিষেক হওয়ার কথা। সেদিন মাঠে হামজা, শমিত, ফাহামিদুলের বাংলাদেশকে দেখতে হয়তো দর্শকের ঢল নামবে।

বাংলাদেশের দুই গোলদাতা সোহেল রানা ও হামজা চৌধুরী
তবে এই রাত পুরোপুরি নিখুঁত ছিল না। ম্যাচ চলাকালে মাঠে ঢুকে পড়ে দুজন দর্শক। ম্যাচ শেষে ঢুকেছে আরও একজন। আবারও সেই পুরোনো শঙ্কা—কোনো জরিমানা আসছে না তো? ম্যাচ শুরুর পর স্টেডিয়ামের বাইরে ফটক ভেঙে গ্যালারিতে ঢুকে পড়েছেন দর্শক। ঢাকা স্টেডিয়ামে ফুটবল ফিরেছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনায় পুরোনো সেই রুগ্ণ ছবিটা রয়েই গেল। তবুও এ কথা বলতেই হয়—এই রাতে আলো ছিল, জয় ছিল, আর ছিল একজন—হামজা চৌধুরী।


SHARE

Author: verified_user