Tuesday, March 4, 2025

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে: ট্রাম্পের উপদেষ্টা

SHARE

 ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে: ট্রাম্পের উপদেষ্টা




যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্‌বিতণ্ডার পর ইউক্রেন সংকট সমাধানের আশা অনেকটাই মিইয়ে এসেছিল। হোয়াইট হাউস থেকে একেবারে খালি হাতে ফিরে লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না।

সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন আশার কথা শুনিয়েছেন রুবিও। রোববার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

শুক্রবারের ঘটনার পরও যুদ্ধ বন্ধে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান রুবিও। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।


তবে রুবিও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত দিলেও সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে—এমন কথা উল্লেখ করে রোববার সিএনএনকে ওয়ালৎস বলেন, ‘(ইউক্রেনের) একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। শুক্রবার ওয়াশিংটনেছবি: এএফপি


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পরই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। সৌদি আরবে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেছে তাঁর প্রশাসন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপও করেছেন তিনি। তবে এসব আলোচনায় ইউক্রেনকে যুক্ত করেননি ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে একপ্রকার চাপের মুখে গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলেনস্কি। সেখানে কথোপকথনের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।



খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে যে চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল, সেটি খনিজ সম্পদবিষয়ক। ওই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। গত শুক্রবারের সেই বিতণ্ডার পর আবার চুক্তিটি করতে প্রস্তুত ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে সম্মেলন শেষে রোববার বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘খনিজ চুক্তিটি (যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের) মন্ত্রীদের সইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এটি সই করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রস্তুত থাকে, তাহলে টেবিলে যে চুক্তিটি রয়েছে, তা সই করা হবে।’আসলে এই চুক্তি নিয়ে আগে থেকেই বড় চাপের মুখে ছিলেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে তিনি যে পরিমাণ সহায়তা পেয়েছিলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর তা শঙ্কার মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতায় বাইডেনের নীতির বিপরীত পথে হেঁটে রাশিয়া ও পুতিনের দিকে ঝুঁকেছেন ট্রাম্প। এখন ইউক্রেন চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি করে ট্রাম্পকে হাতে রাখতে। এতে করে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থাকতে পারবে কিয়েভ।
SHARE

Author: verified_user

0 comments: