নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বিক্ষোভে বিচার ছাড়াই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের যে কোনো প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে আসে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। এই বক্তব্য প্রকাশের পরই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অভিযোগ সামনে আসে। এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ একাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করা জরুরি।
এই বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং শুক্রবার বিকেলে আরও বৃহৎ পরিসরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এক ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর, যেখানে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সক্রিয় রয়েছে।
শুক্রবার এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জামায়াতে ইসলামীর পুনর্বাসনের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন এবং অভিযোগ করেন, একই কৌশলে এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। তবে এনসিপির অন্যান্য নেতারা এ বিষয়ে মতবিরোধ প্রকাশ করায় নাসীরুদ্দীন পরে তার স্ট্যাটাস সরিয়ে নেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় জুমার নামাজের পর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বিক্ষোভ মিছিল করে এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনে 'গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন' গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। চট্টগ্রামে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ ও গণপদযাত্রার আয়োজন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল ও সমাবেশ করেন, যেখানে তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রশাসন ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এভাবে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী এবং বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হন।
0 comments: